
দূরে যখন সীমান্তরক্ষীর সতর্ক সংকেত শুনছিলো কামাল ততক্ষণে বেশ কিছুদূর এগিয়ে গেছে। নীলমার সাথে আগে দেখা করতে পারতো প্রতিদিন। এখন সপ্তাহে হয়ত দুইদিন বা একদিন। বার্ডারে আগে একটু হালকা ছিলো, কিন্তু এখন কেন জানি টাইট হয়ে গেছে। আগে বিএসএফ ঝামেলা করত, এখন বিজিবি বেশ ঝামেলা করে। দেখতে পেলেই লাথি মারে, চড় মারে। ধরে না খাইয়ে ক্যাম্পে রেখে দেয়। আজও নীলমার সাথে দেখা করার জন্য মনটা আনচান করছে। বেশি করছে শরীর। নীলমার লাল ব্লাউজ আর ভাজপড়া শরীরের কথা মনে পড়লেই কামাল আর সহ্য করতে পারে না। তখন সে যে কাজই করুক না কেন,সে যাবেই। আজ এইরকম একটা ভাব তার খেলা করছে সকাল থেকেই। নিজের হাতের কাজগুলো গুছিয়ে দুপুরের দিকেই কামাল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলো না। দূরে বেশ খানিকটা তাকালে দেখা যায় নীলমারদের বাড়ি। একসময় এই পাড়াতে ছিলো। এখন তারা সবাই ভারতে থাকে। নীলমার স্বামী কোলকাতায় থাকে। একটা গ্যারেজে কাজ করে। প্রতিদিন আগে আসতো। এখন আসে সপ্তাহে তিনবার চারবার। নীলমা দেখতে শ্যামলা। লম্বা। চুল অনেক বড়। একটু স্বাস্থ্য আছে। কথা বলে ভারি মিস্টি করে। আদর মাখানো স্বরে। কামালের সব ভালো লাগে নীলমার। কামাল একদিন বলেছিলো চলো তোমারে নিয়ে দেশে চলে যাই। নীলমা এই কখা শুনার পড় খুব রেগে হাতপা নাড়িয়ে বলেছিলো তুমি আর আমার কাছে আসবা না। চলে যাও এখান থেকে। কামাল কিছুই বুঝতে না পেরে শুধু হা করে তাকিয়ে ছিলো। সেদিন মাথা নিচু করে চলে এসেছিলো। কামাল নীলমাকে ভালবাসে। খুব ভালবাসে। কিন্তু নীলমা বাসে কিনা জানে না। সন্ধ্যা নামতেই কামাল সব বেড়া ডিঙ্গীয়ে হাজির নীলমাদের বাড়ির কাছে। নীলমা সন্ধ্যা বাতি দিয়েই রস্তায় চলে এলো। নীলমা কাছে আসতেই প্রতিবারের মতো এবারও সেই ধূপের গন্ধটা পেলো। কামালের এই গন্ধটা ভিষণ ভালো লাগে। খুব ভালো লাগে। নীলমাদের বাড়ির পাশেই তিনটা বড়বড় খড়ের গাঁদা। পাশেই ঘনঘন কালো করে দাড়িয়ে থাকে দুটো আমগাছ। সন্ধ্যা নামলেই যায়গাটা ঘন হয়ে ওঠে। প্রতিবার এই যায়গায় দুইজনেই এক হয়ে যায়। নীলমার বাড়িয়ে দুটো গরু আছে। সেইসাথে থাকে আছে নীলমার মা আর বাবা। সবাই একসাথে থাকে। কামাল প্রতিবার নীলমার জন্য কিছু টাকা নিয়ে আসে। কামালের তো কেউ নাই। ও যে কাজ করে সেখান থেকে কিছু রাখে আর সবই নীলমার হাতে তুলে দেয়। এবারো তাই করলো কামাল। প্রতিবারের মতো কামালে দেয়া টাকা সে ছুড়ে ফেলে দেয়। সেই আগের মতো বলে ওঠে কেন তুমি আমারে টাকা দাও। কামাল এবারও কোন কথা বলে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু টাকা সে উঠায় না। প্রায় ঘন্টাখানিক কামাল নীলমা একসাথে থাকে। তারপর রাত গভীঢ় হলেই সে চলে যায়। এই একঘন্টা কামালের কাছে একটা সুখ,যেটা সে বুঝে না। শুধু এতটুকু বুঝে সারারাত্রি ধরে থাকতে পারতো তাহলে তার আরো ভালো লাগতো। কামাল বাড়ি এসেছে বেশ অনেকক্ষণ ধরে। শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। আজ তার শরীরটা তার মনের কথার সাথে মিলিয়ে কেমন যেন করছে। কোনভাবেই নীলমার ঠোটে কামড়ে ধরে আদরের অনুভবটা ভুলতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। কামাল দাড়িয়ে গেল। সোজা কিভেবে কিবুঝে নীলমার বাড়ির দিকে রওনা করল। সব ঠিক ছিলো। পার হয়ে গেছে সীমান্ত বেড়া। গভীর রাত্রে সীমান্তের সীমারেখায় যারা বসবাস করে তারা শুনতে পেলো একটা আওয়াজ। আর কিছু না। সকালের দিকে সবার মুখে রটে গেল জমির আলে কামাল মরে পড়ে আছে। মাথাটার একপাশে গুলি লেগে উড়ে গেছে। চোখ একটা বের হয়ে গেছে। বড়বড় লাল পিপড়ায় মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে।
লেখক পরিচিতি:রেজা নওফল হায়দার। পেশায় সাংবাদিক। ছোটগল্প, কবিতা লেখার ইচ্ছেটা প্রবল। লেখার প্রতি অদম্য ভালবাসা সবসময়। নিজের অনুভুতি দিয়ে যত্ন করে লেখেন। মানুষের আবেগ তার লেখার প্রেরণা।
3 Comments