শিক্ষা প্রতিদিন: বাংলাদেশে ৫ আগষ্ট ২০২৪ স্মরনীয় হয়ে থাকবে। সেদিন ছিলো সোমবার ভোর হয়েছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। সকালটা ছিল মেঘলা, রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। বেলা ১০টার পর থেকে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, শহীদ মিনার, বাড্ডা, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের জমায়েতের খবর আসতে শুরু করে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও শুরু হয়।
বেলা সোয়া একটার দিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। তখনই মানুষ বুঝে যায়, পট বদলে যাচ্ছে। মানুষ একে একে ঘর থেকে বের হতে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাস্তায় মানুষকে আর বাধা দেয়নি। বেলা আড়াইটায় শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরের পর লাখো মানুষের মিছিল, স্রোগ্নানে মুখর হয় ঢাকা। এ যেন শ্রাবণ মাসে ‘বসন্ত’। এই বসন্ত মানুষের মুক্তির, এই বসন্ত নতুন বাংলাদেশের।
বিকেলের দিকে জনস্রোত গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। একজন উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরশাসক দেখতে চাই না।’ ছয় ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় বিমানবন্দরের কার্যক্রম।
বিকেল চারটার দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দেন।’ তিনি সংঘাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সবাইকে শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্র্বতীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দেবেন তাঁরা।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—বাংলাদেশের মানুষ ২০২৪-এর জুলাইয়ের মতো এত মৃত্যু দেখেনি। অতীতের আন্দোলনের মতো এবারের আন্দোলনেও সামনের সারিতে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। এবারের বিশেষ দিক ছাত্রীদের, নারীদের বড় অংশগ্রহণ। আরেকটি দিক হলো, এবার লড়াই হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেল যখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে, অনলাইন মাধ্যমগুলো চাপে, তখন শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ও আন্দোলনের আদর্শিক লড়াইয়ের পথ হয়ে ওঠে ফেসবুক, টুইটার। সেখানে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ, স্বজন হারানোর বেদনা, পুলিশের গুলি করার ভিডিও চিত্র। তাতে যুক্ত করা ছিল মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশপ্রেমের গান। নতুন নতুন স্রোগ্নান , দেয়াললিখনও তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিল ‘জেনারেশন জেড’, যারা সংক্ষেপে ‘জেন জি’ নামে পরিচিত। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ এই প্রজন্ম তাদের লড়াই তাদের মতো করে করেছে। তাদের ঠেকাতে বারবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। কখনো কখনো ইন্টারনেট চালু থাকলেও বন্ধ রাখা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে শিক্ষার্থীদের দমানো যায়নি। বিস্ময়করভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন আক্রান্ত হলেন, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলেন।
৫২ থেকে ২৪ দীর্ঘ সময়ে ছাত্র আন্দোলন ছিলো একমাত্র মুক্তির আন্দোলন দেশের মানুষ খুঁজে পেয়েছিলো স্বাধীনতা, মুক্তির স্বাদ
August 24, 2024