অদ্ভুত গল্প বলে স্বামীকে অপমান, মায়াকান্না এডিসি হারুনের

Posted by

দেশ প্রতিদিন : শাহবাগ থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় রীতিমতো তুলকালাম চলছে প্রশাসনে। ইতোমধ্যে এডিসি হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং প্রত্যাহার করা হয়েছে শাহবাগ থানার পরিদর্শককে (অপারেশন)। সাময়িক বরখাস্ত ও প্রত্যাহারের মধ্যে ফের এ ঘটনায় নতুন তথ্য সামনে এসেছে। যাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা সেই সানজিদা আফরিনই নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন। সানজিদা রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী। তিনি ৩৩তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিএমপির ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে সানজিদা গণমাধ্যমকে বলেন, বিগত ২০১৯ সাল থেকে আমি নিয়মিত হাইপার-টেনশনের ওষুধ খাচ্ছি। গত ৪-৫ মাস ধরে আমার এই সমস্যাটা বেড়ে যায়। গত দুই তিন সপ্তাহে ধরে আমার বুকের ব্যথাটাও বেড়ে যায়। যথেষ্ট সময় না থাকার কারণে চিকিৎসক দেখাতে পারছিলাম না। গত শনিবার ব্যথাটা আরও বেড়ে যায়, আর ঐদিন ফ্রি সময় থাকায় ঠিক করি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাব। তখন চিকিৎসকের সিরিয়াল নেওয়ার জন্য আমি এডিসি হারুন স্যারকে ফোন করি। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক তার জোনের মধ্যে পড়েছে। স্যার ওসির মাধ্যমে ইমার্জেন্সি একটি সিরিয়াল আমাকে ব্যবস্থা করে দেন।‘সন্ধ্যা ৬ টার পর আমার সিরিয়াল ছিল। তখন গিয়ে জানতে পারি- ঐ চিকিৎসক একটি কনফারেন্সে আছেন, তিনি সেদিন আর রোগী দেখবেন না। তখন আমি এডিসি স্যারকে বলি- স্যার ঐ চিকিৎসক কনফারেন্সে, উনি আজ রোগী দেখতে পারবেন না। আমার একটু ইমার্জেন্সি ছিল অন্য কোনো চিকিৎসক ব্যবস্থা করা যায় কী না। এই কথা বলার পর এডিসি স্যার বলেন আমি আশেপাশে আছি। এসে দেখছি কী করা যায়।’ এডিসি সানজিদা বলেন, স্যার সন্ধ্যা ৭টায় হাসপাতালে এসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একজন চিকিৎসক ব্যবস্থা করেন। আমি ঐ চিকিৎসককে দেখাই এবং তিনি কিছু টেস্ট আমাকে দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী- আমি তখন ল্যাব, ইকো এবং ইসিজি টেস্ট করাই। যখন এ ঘটনা ঘটে তখন আমার ইটিটি পরীক্ষা চলছিল। রুমের বাইরে হট্টগোল শুনতে পাই, এছাড়া চিৎকার চেঁচামেচিও শোনা যাচ্ছিলো। ‘প্রথম যেই চিৎকার শুনতে পাই সেটি এডিসি স্যারের (এডিসি হারুন)। স্যারকে বলতে শুনি- ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন, আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। আমার প্রথম ধারণা হয়েছিল- অন্য কারো সঙ্গে স্যারের ঝামেলা চলছে।’ ‘এর কিছুক্ষণ পরে দেখি আমার স্বামী সেখানে। উনি কেন এখানে, কী করছিলেন, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। উনাকে খুবই উত্তেজিত লাগছিল। উনার সঙ্গে বেশ কয়েকজন ছেলেও ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে মারতে মারতে এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে ইটিটি রুমের ভেতরে নিয়ে যান। স্যার তাদের হাত থেকে বাঁচতে ইটিটি রুমটার এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ালেন।’ ‘তখন আমার স্বামী ঐ ছেলেগুলোকে বলেন তোরা এই দুজনের ভিডিও কর। আমি তখন ইটিটির পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলাম এবং গায়ে অনেক তার লাগানো ছিল। স্বাভাবিকভাবে ঐ পোশাকটা শালীন অবস্থায় ছিল না। আমি তখন আমার স্বামীকে বললাম, এই রুমের ভেতরে তো ছেলে ঢোকার কথা না। আপনি এতোগুলো ছেলেকে নিয়ে কি করছেন। এখন আপনি এদেরকে বলছেন ভিডিও করার জন্য। এইটা নিয়ে যখন আমি চিৎকার করছিলাম তখন আমার স্বামী আমাকে ২-৩টা চর মারেন।’ তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে আমার গাড়িচালকও চলে আসে। আমার গাড়িচালক মাঝখানে দাঁড়ায়, তার ওপর দিয়েও আমার গায়ে হাত তোলা হয়। ভেতরে ঢোকা ছেলেগুলোর মধ্যে একজন ভিডিও করছিল আমাদের। আমি আসলে তার হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করি। তখন ওর সঙ্গেও আমার একটা হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। কোনোভাবেই চাচ্ছিলাম না যে আমাকে ইটিটির পোশাকে কেউ ভিডিও করুক। স্যারের আমি কলিগ, আমি অসুস্থ। এই সৌজন্যতা দেখিয়ে স্যার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। তাদের ইনটেনশন দেখে মনে হচ্ছিলো তারা আসলে দুইজনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটি ভিডিও করতে চান।’ ‘অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য তারা ভিডিও ধারণ করতে চেয়েছিলেন। তারা শুধু ভিডিও ধারণ না, আমার ওপর দিয়ে এডিসি স্যারকে মারার জন্য বেশ কয়েকবার যায়। এইটা কোনো বিষয়ই ছিল না। ছোট একটা বিষয়কে আমার স্বামী বিশ্রী একটি ঘটনায় পরিণত করলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি অসুস্থ এটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু, আমি যে সেদিন ডাক্তার দেখাতে যাবো তা তিনি জানতেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু কোনো কারণে তা তিনি মিস করেন। অথবা ব্যস্ত ছিলেন। যেহেতু ৬-৭ দিন ধরে আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল তাই গিয়েছিলাম।’

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ গনমাধ্যমে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তাধীন বিষয়ে আমার কথা বলা মোটেও সমীচীন হবে না। তদন্তেই বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা। এটুকু বলে রাখি, আমিই প্রথম নির্যাতন বা মারধরের শিকার।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট ও নিজস্ব প্রতিবেদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*