শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: বে-সামাল হয়ে পড়েছে জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম। অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলবার (২৯ আগষ্ট) দুপুরে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) কার্যালয়ে হামলা, কর্মকর্তা লাঞ্ছিত ও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় অফিসে উপস্থিত থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাস (৪০) সহ ৪ জনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, কালিগঞ্জ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায়কে লালমনিরহাট-২ আসন (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের পুত্র ( লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) রাকিবুজ্জামান আহমেদ ডেকে পাঠান। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলকে কালিগঞ্জ স্থানীয় তুষভান্ডার অন্বেষা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী তার সে ডাকে সেখানে যায়নি। এই কারণে হামলা ও ভাংচুর ঘটানো হয়। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃস্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায়। ঘটনা বিষয়ে মন্ত্রী পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তার সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায়ের সম্পর্ক ভালো। ফোনেও কথা হয়। কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম সহ অন্যরা আমার নাম ভাঙিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ছাত্রলীগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব।প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায় বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) দুপুরে তাঁদের কার্যালয়ের পিচরেট মিটার পাঠক শাহিনুর ইসলাম এসে তাঁকে জানান, রাকিবুজ্জামান আহমেদ রাকিব (মন্ত্রিপুত্র) তাঁকে সন্ধ্যার পর অন্বেষা ক্লাবে ডেকেছেন। তিনি তাঁকে (শাহিনুর) বলেন, বাসায় তাঁর দুই স্বজন অসুস্থ, তিনি এখন যেতে পারবেন না। ২৭ আগষ্ট বিকেলে তিনি রংপুরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে থাকতে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল তাঁকে ফোন দিয়ে বলেন,রাকিব (মন্ত্রী পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ) ভাই আপনাকে অন্বেষা ক্লাবে সন্ধ্যার সময় ডেকেছেন। তিনি তাঁকে বলেন, রংপুরে আছি, ফিরতে রাত হবে। সোমবার (২৮ আগষ্ট) সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে তিনি রাকিবকে ফোন দেন। কিন্তু তিনি কল ধরেননি। রকি চন্দ্র রায় আরও বলেন, মঙ্গলবার (২৯ আগষ্ট) বেলা দুইটার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল, সহসভাপতি নুরুন্নবীসহ ৮ থেকে ১০ জন আমার রুমে আসেন। কেন আমি রাকিব ডাকার পরও যাইনি, সেটি তাঁরা জানতে চান। তাদের বলেছিলাম , এটা অফিসের ডেকোরামের মধ্যে পড়ে না, যে মন্ত্রীর ছেলে ডাকলে আমাকে যেতে হবে। তখন শরিফুল ইসলাম আর নুরুন্নবীসহ তাঁরা আমাকে বলেন, “তুই জানিস রাকিব কে? তোকে এখানে মার্ডার করলে তোর কোন বাপ বাঁচাতে আসবে, তুই কাউকে পাত্তা দিস না।” পরে তাঁরা আমার অফিসের আলমারি ভাঙচুর করেন, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ভেঙে ফেলেন এবং আমার উপসহকারী প্রকৌশলী ৪ জনকে চড়থাপ্পড় দিয়ে বের করে দেয়। এ সময় কর্মচারীদেরও বেধরক মারধর করা হয়। কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার কল করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার সত্বে জানায় আমাদের বলির পাঠা বানালেন মন্ত্রীর ছেলে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে তিনিও (মন্ত্রীর পুত্র) ছাড় পাবেন না। তার নির্দেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার মাধ্যমে তদন্ত করলে সত্য পরিস্কার হয়ে যাবে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামান, এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে কালীগঞ্জের নেসকো নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালীগঞ্জ থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বে-সামাল ছাত্রলীগ সভাপতি কালিগঞ্জ নেসকো অফিসে হামলা, ৪ জন কর্মকর্তাদের লাঞ্চিত
August 30, 2023