
শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: লামনিরহাটে অবৈধ ক্ষুদ্র আগ্নে অস্ত্রের অপব্যবহার আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। নির্বাচন ও আন্দোলন ঘিরে প্রাণহানির আশংকা দেখা দিয়েছে। সীমান্ত গ্রাম গুলিতে ঘরে ঘরে অত্যাধুনিক অবৈধ দেশী-বিদেশী ক্ষুদ্র আগ্নেয় অস্ত্রের মজুদ গড়ে উঠেছে সীমান্ত মাফিয়া চক্র। অস্ত্র নদী, রেল ও সড়ক পথে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে। লালমনিরহাটের দূর্গাপুর সীমান্ত গ্রামের এক যুবক বগুড়ায় ২টি বিদেশী পিস্তল ও গুলিসহ আটকের পর বিষয়টি লাইম লাইটে এসেছে। সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি নেই বললেই চলে। বরং উল্টো চিত্র। সীমান্তে চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সীমান্ত বাহিনীর রয়েছে সখ্যতা। এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের। জানা গেছে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ২টি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগজিন ও গুলিসহ ছামিউল মিয়া নামে লালমনিরহাটের সীমান্ত গ্রাম দূর্গাপুরের এক যুবককে পুলিশ আটক করেছে। বুধবার, ২৩ আগস্ট দুপুরে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।আটক ছামিউল মিয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দীঘলটারী গ্রামের সুরত আলীর ছেলে। এর আগে মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকায় একটি চাতালের সামনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস তল্লাশি করে তাকে আটক করা হয়। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, গোপন সংবাদে জানা যায় বুড়িমারী থেকে নারায়ণগঞ্জগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে এক ব্যক্তি অস্ত্র বহন করছেন। রংপুর থেকে পিংকি পরিবহনের বাসটি তল্লাশি করার জন্য গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই ব্যক্তি জানালা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার দেহ তল্লাশি করে দুই পায়ের উরুতে বিশেষ কৌশলে মোড়ানো দুইটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তল, চারটি লোহার তৈরি সচল ম্যাগজিন ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় আটক ছামিউল লালমনিরহাট থেকে জয় নামে এক যুবকের কাছ থেকে এসব অস্ত্র নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় ছামিউলের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের আটকে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান। এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানা পুলিশ কয়েক মাস পূর্বে অত্যাধুনিক বিদেশি আগ্নেয় অস্ত্র সহ দুই যুবকে আটক করে। তারা অস্ত্র দুইটি স্থানীয় বাজারে বিক্রির সময় বচসা সৃষ্টি হলে পুলিশে খবর দেয়া হয়। এদিকে সম্প্রতি পশ্চিম বঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচিত ক্ষুদ্র অস্ত্রের অপ ব্যবহার বহুলাংশে বেড়ে যেতে দেখা গেছে। লালমনিরহাট সীমান্তের মোগলহাটে নোম্যান্স ল্যান্ড সংলগ্ন ভারতের গ্রামে নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশী নাগরিক ( কেউ বলে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বৈত নাগরিক) ফকরা বাবু ও টেরে নামে দুই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা কান্ডের ঘটনায় পরিস্কার হয়েছে সীমান্ত গ্রাম গুলিতে এখন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সন্ত্রাসীদের হাতে হরহামেশাই অস্ত্র দেখা যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের সাথে প্রায় ২৮৫ কিঃমিঃ সীমান্ত গ্রাম রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের। এই সব সীমান্ত গ্রামে প্রায় ৭৪ কিঃমিঃ কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই। কোথাও কোথাও তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও বুড়িতিস্তা নদীর দূর্গম চর ও নদীপথ রয়েছে। এসব নদীপথ ও দূর্মচর সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। লালমনিরহাটে কোন নৌ পুলিশের কার্যক্রম নেই। দূর্গম চরাঞ্চলেও বিজিবির চৌকি, ঝাপড়ি বা নিয়মিত টহল নেই। দুর্গম ফলিমারী চরের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস ছাত্তার জানান, ফলিমারী চর সন্ধ্যার পর আল্লাহ হেফাজত করে থাকে। এই চরটির পাশে ভারত সীমান্ত এখানে ৫/৬ শত মানুষের বসবাস কিন্তু কোন পুলিশ ফা়ঁড়ি, বিজিবির ফাঁড়ি বা বিওপি ক্যাম্প নেই। সন্ধ্যায় চোরাচালান, মাদক সহ নানা অপরাধ বেড়ে যায়। সাধারণ ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। প্রবীণ মানুষ সোবাহান জানান, বর্ষা মৌসুমে বড়বড় নৌকা, কার্গ এসে ফলিমারী চরে ভীড়ে পন্য সামগ্রি বোঝাই করে নদী পথে ঢাকা নিয়ে যায়৷ কৃষি পণ্যের আড়ালে অস্ত্র, মাদক পাচার হয়ে আসছে। কে কার খোঁজ রাখে। লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বিজিবি এক বিওপি হতে অন্য বিওপি পর্যন্ত দ্রুত কমিনেট করারমত রাস্তা নেই। বিওপি টু বিওপিতে দুই একটি মোটরসাইকেল ছাড়া কোন যানবাহন নেই। রয়েছে পর্যাপ্ত সৈনিক সংকট। নানা সীমাবদ্ধতা থাকার পরও সীমান্ত বাহিনী সীমান্ত সুরক্ষায় কাজ করছে।