পরিবর্তন হয় সময়

Posted by

স্টুডিওতে আজকে দর্শকের সামনে উপস্থিত হয়েছেন দেশের স্বনামধন্য কর্পোরেট অতিথি সাদিয়া খান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় আছেন অর্ণব খান। অনুষ্ঠানটি সরাসরি ভূমি টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটির দৈর্ঘ্য প্রায় ত্রিশ মিনিট। অনুষ্ঠানের প্রযোজক ও মালিক এর মধ্যে হিসাব করে ফেলেছেন তাদের এই অনুষ্ঠানের টিআরপি ওই সময় সবগুলো চ্যানেল থেকে বেশি। বিজ্ঞাপনের ভালো সাড়া আছে।

অনুষ্ঠানটি চলছিল। অর্ণব খান সাদিয়া খানকে প্রশ্ন করলেন তার ছোটবেলা সম্পর্কে। সাদিয়া খান হেসে বললেন জীবনের এতটা সময় পার করে এসে সেই ছোট্টবেলার স্মৃতি তেমন মনে নেই। শুধু মনে আছে আমাদের গ্রামের বাড়ির বটগাছটার কথা। ওখানে সনাতন ধর্মের লোকেরা পূজা দিতে আসতো। বেশ উপভোগ করতাম। বিভিন্ন শব্দ বিভিন্ন বাদ্য মিলে একাকার। মেয়েরা নানান রঙের কাপড় পড়ে আসতো। তাদের পরিবার থাকতো সাথে। ভালই লাগতো। মাসে দুইবার করে অথবা প্রতি মাসে একবার করে এটা হত। আব্বা নিষেধ করতেন যেতে। তারপরও আমরা ভাইবোনেরা যেতাম। বাবা অনেক বড় কর্মকর্তা ছিলেন কিন্তু আমাদের তেমন ঢাকা থাকা হয়নি। মূলত বাবা ঢাকায় এলেন আমার কলেজে ভর্তি হবার সময়। তারপরে গ্রামে খুব একটা যায়নি। কিন্তু বিষয়টা মনে আছে।

অর্ণব খানের প্রচারিত অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে। যারা বিজ্ঞাপন দিত তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চ্যানেলের উপর এত প্রেসার যে একসময় বন্ধ হয়ে গেল। সব ঘটল দু’মাসের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছেন। যিনি ক্ষমতায় এসেছেন তিনি আসলে পুতুল হয়ে বসে আছেন। সরকার পরিচালনা করছে তার আত্মীয় স্বজনরা। প্রথম আঘাত মিডিয়ার উপর। টেলিভিশনটি সরকার দলীয় এক নেতার। তিনি পিঠ বাঁচাতে ছেড়ে দিয়েছেন। সব বন্ধ। সাদিয়া খান ফিরে না আসা পর্যন্ত ব্যবসায়ী সমাজ ও অন্য দেশের প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূতরা সব এক হয়ে সরকারের উপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করছেন। চারিদিকে অন্ধকার। সাধারণ মানুষ মুক্ত জেলখানায় আছে।

অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে অনুষ্ঠানটি শেষ হলো। সাদিয়া খান বের হয়ে নিজস্ব গাড়িতে উঠলেন। বাসার দিকে যাবেন। একমাত্র ছেলে নাফিসকে নিয়ে বসতে হবে। নাফিস দেশের বাইরে যাবে বউকে নিয়ে।

সময়টা উত্তাল। সাধারণ মানুষ চাইছে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করুক। চারিদিকে হাহাকার। অনর্থক করে বোঝা। বিদেশে টাকা পাচার, প্রশাসনের সীমাহীন দুর্নীতি, মানুষের বেঁচে থাকাটা কষ্টসাধ্য করে তুলছে। এরই মধ্যে অভাবের তাড়নায় দেশের একটি উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলায় দুটি পরিবার আত্মহত্যা করেছে। সরকার দলীয় এক ইউনিয়ন নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে সাধারণ মানুষ। দেশের গোডাউনে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে শস্য আমদানি করতে ইচ্ছুক সরকার। অবৈধ সম্পদের পাহাড়ে বসবাস করছেন দেশের গুটি কয়েক মানুষ। মাদকের চেয়ে গেছে গোটা দেশ। রাজধানীর একটি বিশেষ মনোরম জায়গায় প্রকাশ্যে মাদক সেবন কারীদের বাধা প্রদান করায় একজন পথচারীকে বেদম পিটিয়ে আহত করেছে মাদকাসক্তরা। হর হামেশা গ্যাং রেপের সংবাদ প্রচার করছে দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা সাহসী আলো। শান্তি নেই দেশে শান্তি নেই মনে। চারিদিকে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ। যিনি সরকার প্রধান তিনি মহান সংসদে তার নাদুসনুদুস শরীর নাচিয়ে হাসতে হাসতে সংকট ও দুর্ভিক্ষের কথা প্রচার করছেন।

হঠাৎ এক শুক্রবারে একটা অদ্ভুত ছবি প্রকাশ করে দেশের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। তাতেই নড়েচড়ে বসেছে গোটা দেশ। যিনি তুলেছেন তিনি দূর থেকে জুম করে আলু থালু বেশে খুপড়ির সামনে বসে আছেন এক মহিলার ছবি। মহিলার চেয়ে থাকা ও অবয়বের কাঠামো প্রমাণ করছে তিনি ছয় মাস আগে হারিয়ে যাওয়া সাদিয়া খান। দেশে আবার হই হই রই। গোয়েন্দা সংস্থা, মিডিয়া, প্রশাসন, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়িক সংগঠন, বিদেশী দেশের রাষ্ট্রদূত, এনজিও ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা সবাই খোঁজখবর নেয়া শুরু করলেন। একটি মেডিকেল টিম তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এলো। ঢাকার সব থেকে আধুনিক হাসপাতালে তার চিকিৎসা করানো হলো। উনি প্রবল আঘাতে স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন ঘটনা সূত্র ধরে সাহসী আলো নামক পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ হল।

” সাদিয়া খান একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান শেষ করে যখন বাসায় ফিরছিলেন তখন রাস্তায় তার গাড়ির গতিরোধ করে তাকে অপহরণ করা হয়। তার ড্রাইভার ইদ্রিসকে হত্যা করে শীতলক্ষা নদীতে সিমেন্টের বস্তা বেধে ডুবিয়ে রাখে। গাড়িটি ধোলাইপাড়ের কোন একটি গ্যারেজে বিক্রি করে দেয়। সাদিয়া খানকে বেধড়ক মারধর করে এবং ইলেকট্রিক শক দেয়। আঙ্গুলের নখ উপড়ে ফেলে চুল কেটে দেয়। প্রচন্ড মারে তার ডান চোখ এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তিনি অন্ধ হয়ে যান। আলপিন দিয়ে শরীরের ক্ষত তৈরি করে। দীর্ঘদিন না খাইয়ে রাখে এবং একপ্রকার চেতনা নাশক ইনজেকশন পুশ করে দিনের পর দিন। তারপর রাজধানীর কোন একটি শহরতলীর ছোট্ট গলির মধ্যে ফেলে রাখে। তিনি স্মৃতি লোপ পাওয়া মানসিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাগল হয়ে যান। “

তারই অবস্থার জন্য সাহসী আলো দায়ী করেন সরকার প্রধানের নিজস্ব ঘরে আত্মীয় শেখ আমজাদ হোসেনকে। যিনি একাধারে আত্মীয় ও মন্ত্রী। একটি সভায় সরাসরি বাকবিতন্ডা জড়িয়ে পড়েন শেখ আমজাদ ও সাদিয়া খান। তারপর থেকেই প্রতিশোধের নেশায় তিনি নিজের লোকদের দিয়ে এমন অপকর্ম করেছেন। ঘটনার সূত্র ধরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দেশ ও দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে প্রশাসনের সৎ কর্মকর্তারা চাপ প্রয়োগ করেন। পরিবর্তন হয় সময়ে। দেশ বাঁচে জনগণ বাঁচে।

লেখক পরিচিতি: রেজা নওফল হায়দার। সাংবাদিক ও ছোট গল্প লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*