
এস ঢাকার পাট চুকিয়ে নিজের গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছে এইবছরেই। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ভালো আছে। প্রতিদিন সময় করে সব কাজ শেষ করে বউকে নিয়ে বিকালে ঘুরতে যায়। তারপর রাতে ফিরে ডিনার করে গল্প করতে করতে শুয়ে পড়ে।
বউয়ের সাথে কথা বলে বাড়ির দুইতলা অংশে নিজেদের মতো করে সাজাবে বলে ঠিক করে তারপরের সপ্তাহে কাজ শুরু করে দেয়। রাজমিস্ত্রির সাথে কথা বলে একটা বিষয় বুঝতে পেরেছে গ্রামের মিস্ত্ররা খুব বেশী বোঝে বা বোঝানোর চেষ্টা করে যাতে করে বাড়ির মালিক একবার কাজে হাত লাগালে তাদের কাছে জিম্মী হয়ে পড়ে। আর এটা বুঝে যাবার পর এস বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে কাজটাকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ফেলে। যেইভাবা সেই কাজ। মিস্ত্রীর সাথে একটা কথাই সে বলে রেখেছে কাজের সময় এটা ওটা আনার বায়না করতে পারবে না। কাজের সময় কাজ। আর যেভাবে প্লান বুঝিয়ে দিবো সেভাবেই কাজ করতে হবে। ভালো একটা দিন দেখে কাজ শুরু হয়ে গেলো। এস যেভাবে প্লান করেছে সেভাবে যদি কাজ হয় তাহলে দুইতলা হবে দেখার মতো। শুধু সমস্য বেধে গেলো দুইতলায় উঠার সিড়িটা এতো সরু যে কাজ করতে গেলে বা উঠতে গেলে খুব সমস্য হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। ওটা তৈরি হয়েছে অনেক বছর আগেই।
যাইহোক এসের খুব পছন্দ চারপাশে বারেন্দা হবে। সাথে থাকবে বড় বড় জানালা। সব মিলিয়ে ৭৯৭ স্কয়ারফুটের ছাদে যেভাবে করা যায় সেবাবেই হচ্ছে। দুটো মাস্টার বেড, দুটো ওয়াশরুম, ডাইনিং রুম, বড় ড্রয়িং রুম, আলো বাতাস পর্যাপ্ত। মেঝেতে ওয়ালের রংয়ে মানানসই টাইলস। এসের বাড়ির সব থেকে দেখার বিষয় আরামদায়ক ইন্টোরিয়র। কাজ শেষ হতে সময় লাগলো ৪৫ দিন। তারপর আরো বেশ কিছু কাজ শেষ করতে চলে গেলো আরো কিছু দিন। বড় হুজুরকে অনুরোধ করে মিলাদ দিয়ে ডাবল এস উঠে পড়লো নিজের ফ্লাটে।
এরইমধ্যে এসের খুব প্রিয় বন্ধু প্রসাশনিক কাছে পস্টিং হয়ে এসেছে। প্রিয় এল এসেই এসকে ফোন। আমিতো তোদের এখানে। এই কথা শুনে এস খুব খুশি। এসের চোখের সামনে ভেসে উঠলো সুখের স্মৃতি। ওকে যে ও মন থেকে ভালবাসে। এলকে ফোন করে বলবো তুমি চলে আসো আমার বাড়িতে। এল বললো। আসবো তবে এখন কেবল নতুন দায়িত্ব নিলাম। একটু সময় আর সামলে নিয়ে তারপর আসবো। মাসের মাঝামাঝিতে এল ফোন করে বললো আজকে আসবো। বৃহস্পতিবার বিকালে আসবো শুক্রবার থাকবো। ডাবল এস খুব খুশী। মজার মজার সব রান্না করবে সে তার প্রিয় মানুষটির জন্য। এস বাড়ি থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে মধুমতি নদীর পাশে যুগানিয়া বাজার থেকে নদীর বাগদা চিংড়ী মাছ, পাবদা মাছ, নদীর রুই, বিলের কই মাছ, ছোট চিংড়ী, গরুর গোস্ত, চুই ঝাল আরো অনেক সদাই। আরো নানান রকমের মিস্টি।
যথাসময়ে প্রিয় এল এসে হাজির। ছিলো দুইজন আজ তিনজন। আনন্দ চোখে মুখে। হৈহৈ করতে করতে তিনজনই উপরে উঠলো। এলতো এসের বাড়ি দেখে খুব খুশী। এল বললো সুন্দর করে সাজিয়েছিসতো। এস বললো বেশ দূর থেকে এসেছিস রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে। আমি ডাবল এসকে বলছি তোকে কফি করে দিতে। সবাই কফি নিয়ে বারান্দা বসে রইলো। তারপর কতোরকমের গল্প। এলাকার গল্প। জীবনের গল্প। গল্পের লতাপাতায় ভর করে আরো কতো গল্প। রাতের খাবার তৈরি করে টেবিল সাজিয়ে পরিবেশন করলো ডাবল এস। কতো রকমের বাহারী খাবার। তিনজনে মিলে মজা করে খেলো। খাবার পর আবার গল্প। এরমধ্যে সময় গড়িয়ে মাঝ রাত। ঘুমতে যাবার সময়। সবাই যারযার ঘরে এলো ঘুমতে। মানুষ মানুষকে ভালবাসে। সেই ভালো লাগাটা সবসময়ই তারুণ্যের ভরপুর থাকে। কেন জানি ঘুম আসছিলো তিনজনেরই। এল ওর রুমে এসে শরীর ছেড়ে দিয়ে বিছানায় আয়াশে শুয়ে পড়লো। চোখের কোনা দিয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। খুব একা লাগছে। কোনভাবেই সামলাতে পারছে না নিজেকে। চমকে উঠলো নীল আলোয় একটা শরীরের আবছা ছায়া দেখে। ছায়াটা কাছে এলো। আলতো করে চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে ছায়াটা আরো কাছে এসে ঠোটে ঠোট রেখে আদর করতে করতে জড়িয়ে ধরলো। দুটো ছায়া আনন্দে ভালবেসে বিলীন হয়ে গেলো। সুখের পরশ বুলিয়ে হাজারো পাখির কলতানে ঘুম ভাংলো এলের।
- গল্পের প্রয়োজনে গল্পের সবার চরিত্রের নাম অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।
- লেখক পরিচিতি: রেজা নওফল হায়দার। ছোট গল্প লেখক \ সাংবাদিক \ সম্পাদক- সময়প্রতিদিন টুয়েন্টিফোর