হঠাৎ করেই শেষ

Posted by

সাব্বির কলেজ থেকে ফিরছিলো। পকেটের ফোনটা ভাইব্রেশন হচ্ছে অনেকক্ষন ধরে। কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও ফোন বের করতে পারছে না। এই নিয়ে প্রায় পাঁচবার বাজলো। হঠাত করেই মাহীন ভাইয়ের দোকান খোলা দেখে বড় পা ফেলে দৌড়ে ঢুকে গেলো দোকানের মধ্যে। ভাই দোকানের গদিতে বসা। সাব্বিরকে দেখে বললো তোদের কি এই সময়ে ছুটি হয় নাকি। না ভাই আরও পরে হয়। আজ শেষ পিরিয়ডের স্যার আসে নাই। তাই আমি আগেই বের হয়ে গেছি। সন্ধ্যায় গিয়ে টিউশনিটা একটু আগে করাবো। মাহীন ভাই আর কোন কথা বললেন না। দুপুরের এই ভাগে মাহীন ভাই দোকানে থাকে সেটা ও জানতো না। কারণ ভাই দুুপুরে খেতে যায় বাসায়। তারপর রেষ্ট নিয়ে সেই পাঁচটায় আসেন থাকেন রাত অব্দি। ভাই সাবেক ছাত্র নেতা। অনেক টাকা করেছেন। সাব্বিরদের কলেজের একসময়ের বড়ভাই। সবাই ভেবেছিলো ভাই পুলিশে যাবেন। কিন্তু একটা মার্ডারের মামলায় পড়ার পর ভাই আর পড়াশুনা করেন নাই। এলাকায় মাহীন ভাইয়ের পরিচিতি অনেক। খুব ভালো মনের মানুষ। সবার জন্য চেষ্টা করেন। মাহীন ভাইয়ে বাবা ছিলেন অনেক বড় রাজনীতিবীদ। ভাইয়ের অন্য দুইভাই একজন ডাক্তার অন্যজন জজ। একবোন তিনিও ডাক্তার। বিদেশে থাকেন। আর মাহীন ভাই এলাকার সব থেকে বড় দোকান, আড়ৎ, মাছের ব্যবসা। আরো অনেক ব্যবসা আছে। সাব্বিরের টিউশনি মাহীন ভাই ঠিক করে দিয়েছেন। কলেজের কেউ এলেই মাহীন ভাই সবাইকে নিজের মতো করে সাহায্য করে। এই এলাকায় মাহীন ভাই যা বলেন তাই হয়। কোন এলাকার একটা খেলা হবে। ভাই সাথে সাথে অনেকগুলো টাকা, জার্সি দিয়ে দিলেন। বিশেষ দিনে ভাই সবাইকে খাওয়ান। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিদিন রাতে ভাইয়ের কাছে আসেন। পরামর্শ করেন। ভাইয়ের বাবা প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের লোক। অনেকবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন।
সাব্বির দাড়িয়েছিলো। ভাই বললেন তুই এক কাজ কর হোসেনের ছাতাটা নিয়ে বাসায় চলে যা। লজ্জায় লাল হয়ে সাব্বির বললো ভাই একটু বৃষ্টি কমলে আমি চলে যাচ্ছি। বৃষ্টি একটু কমতেই সাব্বির দিলো এক দৌড়। সোজা বাসায়। বাবা কেবল অফিস থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সাব্বিরকে দৌড়ে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে তাকালেন। সাব্বির রুমে গিয়ে গোছল করে ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো। আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মনিকাদের বাসায় গিয়ে এখনই পড়াতে হবে। মেয়েটার পরীক্ষা।
হলুদ একটা টিশার্ট পড়ে সাব্বির মনিকাদের বাসায় এলো। মেয়েটা আগে থেকেই বসে ছিলো। সাব্বিরকে দেখে আবার গুছিয়ে বসলো। সাব্বির মনিকাকে বললো তুমি তাড়াতড়ি করে পরীক্ষার সাজেশন পেপার বের করো, আমি টেস্ট নিবো। মেয়েটা রোবটের মতো। সাব্বির সাথে সাথে সাব্বির বেশ কয়েকটা প্রশ্ন বের করে ঠিক করে দিলো। বললো এই প্রশ্নে উত্তর লিখো। ততক্ষণে আমি তোমার জন্য একটা ছোট নোট তৈরি করে ফেলি। সাব্বির মনোযোগ দিয়ে নোট তৈরি করতে থাকলো। মনিকার আম্মু ঘন এক কাপ চা আর চকোলেট বিস্কুট নিয়ে এসে বললো, সাব্বির তোমার আম্মু কেমন আছেন। সাব্বিরের আম্মু আর মনিকার আম্মুর বাড়ি একই এলাকার। সাব্বির মাথা তুলে বললো ভালো আছে, খালাম্মা। মনিকার আম্মু আর সময় না নিয়ে চলে গেলেন ভিতরে। এই বাড়িতে সাব্বির পড়ায়। সাব্বিরকে সবাই পছন্দ করে। সাব্বির মনে করে তাকে সব থেকে আদর করেন খালাম্মা। সাব্বির এলেই খালাম্মা ভালো কিছু খাবার নিয়ে আসবেই। এরই মধ্য সাব্বির মনিকার জন্য ছোট নোটস তৈরি করে দিয়েছে। তারপরও মনিকার পরীক্ষা নিয়েছে। সব মিলিয়ে সাব্বির আজকে খুশি। মনিকার আগামীকালের পরীক্ষা ভালো হবে এটাই আশা করছে সাব্বির।
আজ একটু বেশী সময় দিয়েছে মনিকাকে। মেয়েটা এমনিতেই মেধাবী। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। প্রথমে সে নারভাস হয়ে যায়, তারপর সাহস দিলে ভালো করে। এইটাতে ভয় সাব্বিরের। এখনো পর্যন্ত যে কয়েটা পরীক্ষা দিয়েছে তেমন সমস্যা দেখে নাই। আবার ছোট খাট বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি ভালো লাগে না। সব থেকে খারাপ লাগে বৃষ্টি হলেই রাস্তার ধুলা কাদা হয়ে পায়ে নকগুলোতে ঢুকে পড়ে, তারপর খুব কষ্ট হয়। অবশ্য একটা সাইকেল আছে সাব্বিরের। কিন্তু সাইকেল চালাতে ইচ্ছে করে না। বাসায় ঢুকে সোজা কল পাড়ে গিয়ে স্যাতস্যাতে বৃষ্টি মাথায় করে পা ধুয়ে রুমে গিয়ে চুপচাপ বসলো। আম্মু গরম ভাত আর আলু ভর্তা সেই সাথে ডিম ভাজি দিয়ে প্লেট সাজিয়ে দিয়ে গেছে। সাব্বির খুব আরাম করে খেয়ে মশারী টানিয়ে শুয়ে পড়লো।
পরের দিন সকাল বেলা গোসল করে কলেজে চলে গেলো। কলেজের কাছে আসতেই সাব্বির একটা শোরগোল শুনতে পেয়ে মনোযোগ দিয়ে তাকাতে দেখতে পেলো, হাসানের ছোট ভাইকে মারছে কারা যেন। হাসানের ছোট ভাইকে খুবই ¯েœহ করে সাব্বির। তাই কাছে গিয়ে সবাইকে থামতে বলতেই পিছন দিক দিয়ে কে যেন এসে কিছু একটা মাথার খুলিতে ঢুকিয়ে দিলো। সাথে সাথে খুলি ভেঙ্গে হলুদ মগজ আর রক্ত বের হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে গেলো। সাব্বিরের আর কিছু মনে নেই।
আম্মুর কান্নার আওয়াজ অনেকক্ষন ধরে শুনতে পাচ্ছিলো সাব্বির। কিন্তু গাড় অন্ধকারে চোখ খুলতে পারছে না। চারিদিকে কোন আলো নেই। গাঢ় অন্ধকার। তারপর ধপাস করে শরীরটাকে কে যেন কোথায় ছুড়ে ফেলে দিলো। কাকিয়ে উঠলো সাব্বির। সারা শরীর ব্যাথায় কেমন যেন করছে। তারপর আর কোন শব্দ নেই। শরীরের চারপাশে কি যেন কিলবিল করে চলে গেলো। পানিতে পচপচ করছে। অদ্ভুদ সব শব্দ। তারপর আর কোন শব্দ নেই।
চোখ খুলতেই সাব্বির গাড় রংধনু দেখতে পেলো। নদী সবুজ গাছ, গ্রাম্য মাঠ। পাখির উড়ে যাওয়া। এতো ভালো লাগছিলো। চুপচাপ নদীর পাড়ে গিয়ে বসে রইলো। ধানক্ষেতে গিয়ে বাতাসের সাঙ্গে দোল খেলো। বাঁশের উপর উঠে আবার দোল খেলো। সফেদা গাছের ডালে উঠে পা দুলিয়ে বসে রইলো।

লেখক: রেজা নওফল হায়দার / ছোট গল্প লেখক / সাংবাদিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*