মোঃ সবুজ সরদার,বিনোদন সময়: ওম শান্তি ওম বের হয়েছিল ২০০৭ এ! কেউ কি বলতে পারবেন?? ইজ ইট এ কমেডি? এ হরর? এ রোম্যান্টিক? অর এ সুপারন্যাচারাল মিস্ট্রি? ঠাওর করে বলতে পারবেন কেউ? একটা সিনেমা যেট শুরুতে মনে হচ্ছিল একটা Retro Parody. ৭০-৮০ দশকের বলিউডকে পচাচ্ছে, রিয়েল লাইফ কিংবদন্তীদের পচাচ্ছে, নিজেদেরকেও পচাচ্ছে, কথায় কথায় ঝড়ছে পাঞ্চলাইন এর মাঝখান দিয়েই কখন যে সেটা হয়ে গেল একেবারে হৃদয় উষ্ণ করে দেওয়া রোম্যান্টিক স্টোরি যেন টেরই পাওয়া গেল না। এরপর হুট করেই সেই সিনেমা প্রবেশ করল কেওটিক থ্রিলার জোনে!! হলো একটা কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার, একটা planned arsony! পরিস্থিতি একেবারে ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত হয়ে হয়ে গেল ড্যাম্ন সিরিয়াস! হল মেইন নায়ক নায়িকার মৃত্যু ক্লিফহ্যাঙ্গার… এরপর দুম করে ৩০ বছর পরে প্রেজেন্ট ডে তে নিয়ে আসা হল তখন শুরু হল পুনর্জন্ম পূর্বজন্মের স্মৃতি এসব নিয়ে একটা সুপারন্যাচারাল মিস্ট্রি ভাইব! এরপর ক্লাইম্যাক্সে যেটা প্রবেশ করে একেবারেই একটা মিস্ট্রি হরর থ্রিলারে!! কিভাবে ঐ ছবিতে আগুন ধরে গেল, কিভাবে ডুপ্লিকেট শান্তি রুমে না পৌঁছালেও রুমে শান্তিকে দেখা গেল, কিভাবে মিউজিক লঞ্চে ঐ ঝাড়বাতিটা এমনি এমনি মুকেশকে আঘাত করল এইসব একদম লাস্ট টুইস্ট রিভিলের আগ পর্যন্তই আপনার অবচেতন মনে প্রশ্ন সৃষ্টি করবে, কিন্তু কাহিনীর ফ্লো তে আপনি ধরতেই পারবেন না! এরপর লাস্টে যখন জিনিসটা রিভিল হবে আর একে একে সব “লুজ এন্ডস” মিলে যাবে… আপনার প্রতিবারই দেখার সময় মুখটা হা হয়ে যাবে যে এতো কেয়ারফুলি ক্রাফটেড টুইস্ট বলিউড ইতিহাসে এর আগে কোনদিন দেখেছেন কিনা! একটা সিঙ্গেল সিনেমার মধ্যে হাস্যরস, প্রেম, হরর, সুপারন্যাচারাল, থ্রিলার আর মিস্ট্রি- পাঁচটা জিনিসই একদম সুন্দরভাবে ভাগ ভাগ করে সাজানো এবং প্রতিটা জিনিসের ই স্বাদ দেওয়া… এইটা যে কতটা ব্রিলিয়ান্ট বিষয় এটা আসলে বলে বুঝানো সম্ভব না। হ্যাঁ অনেক মুভিই বিভিন্ন জনরাকে “ব্লেন্ড” করে… কিন্তু সেই ব্লেন্ডে কিছু কিছু জিনিস কম হয়ে যায় কিছু কিছু বেশী। কমেডি মুভিতে হরর বা মিস্ট্রি দিলেও সেগুলো পেরিফেরাল হয়ে কমেডিটাই বেশী ফুটে। উল্টাটা আরও বেশী হয়! সর্বোচ্চ দুইটা বা তিনটা জনরা একসাথে কেয়ারফুলি মিশানো যায় (রোম্যান্টিক কমেডি, রোম্যান্টিক একশন, একশন কমেডি এমন)… কিন্তু একটা সিনেমা দেখতে বসে তাঁর ভিতর ৫টা ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভার একেবারে পুরোপুরি আলাদা আলাদাভাবে এবং প্রতিটাই পরিপূর্ণ ভাবে পাওয়া যাওয়া… এটা খুবই খুবই রেয়ার এবং খুবই খুবই ব্রিলিয়ান্ট আমার মতে! এই ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভার আলাদা আলাদাভাবে পাওয়ার মেইন কর্তৃত্ব অবশ্যই সাউন্ড ইফেক্টস, ভিএফএক্স, আর অভিনয়ের! সাউন্ড ইফেক্ট আর ভিএফএক্স যখন যে জনরায় শিফট করেছে সেই অনুযায়ী একদম ট্রুলি সেই জনরাকে কমপ্লিমেন্ট করেছে… (কিছু কিছু সীনে হরর সাউন্ড আর ভিএফএক্স এফেক্টস দিয়ে আসলেও আত্মা কাঁপিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক!
অভিনয়ের কথা কি বলব? অনেকেই হয়ত এখন মোটাদাগে মনে করতে পারেন যে ওম শান্তি ওম এ শাহরুখ একেবারেই বাজারি আর ফালতু অভিনয় করেছেন, যেহেতু এই মুভিও সম্পর্কেই অনেকের ধারণা যে এটা বাজারি মুভি! তবে এই মুভিতে শাহরুখের ক্যারেক্টার যে কতটা Multifarious ছিল এইটা সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়! বিশেষ করে সেকেন্ড হাফে তাঁর OK ক্যারেক্টার টা! একটা মানুষ যে বড় হয়েছে একটা সুপারস্টার স্টার কিডের স্বভাবসুলভ “এলিটিস্ট পারসোনালিটি”, অ্যারোগেন্স, অহংবোধ নিয়ে… কিন্তু আবার একই সাথে সে আগের জন্মের একটু গুফি, রোম্যান্টিক সহজ সরল সুন্দর হৃদয়ের “ওম”… এই দুইটার ফলে যে “Dissosiative Identity Disorder” বা “স্প্লিট পারসোনালিটি”র জন্ম হয়… এইটা যে শাহরুখ কতো ব্রিলিয়ান্টলি প্লে করেছেন তা কয়জন খেয়াল করেছেন সত্য করে বলুন তো? মুভিটা দেখার সময়ই খেয়াল করলে বুঝা যায় যে… “ওকে” আর “ওম” দুইজনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্ল্যাশ শাহরুখের ক্যারেক্টারের স্বভাব চরিত্রে ফুটে উঠছে… ক্যারেক্টারটা বিভিন্ন সীনে নরমাল কাইন্ড, বেনোভলেন্ট “ওম” হিসেবে ইন্টার্যাক্ট করতে করতেই হুট করে একটা এরোগেন্ট, শর্ট টেম্পারড স্নটি এলিটিস্ট সুপারস্টার OK তে পরিণত হচ্ছে… এতেই বুঝা যায় OK ক্যারেক্টার নিজের অজান্তেই “স্প্লিট পারসোনালিটি”তে ভুগছিলেন, এবং সেটার Nuance টা শাহরুখ এতই সুনিপুনভাবে নিজের অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন যে খালি চোখে বুঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়! শাহরুখ খান এর অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে আসলে এখানেই মিটে যাওয়ার কথা!