সাইবেরিয়ার অয়মিয়াকন শহরে ভয়ঙ্কর ঠান্ডা

Posted by

নুরুন্নাহার হীরা, সহ-সম্পাদক: ডীপ ফ্রীজের চেয়ে বেশি ঠান্ডায় বসবাস করে এমন একটি দেশ সেন্ট্রাল সাইবেরিয়ার অয়মিয়াকন শহরে ডিপ ফ্রীজের চেয়ে তিনগুন তাপমাত্রা বিরাজ করে ।পৃথিবীর সব চেয়ে শিতল এই শহরে গরম পানি ছুড়ে মারলে মাটিতে পড়ার আগে বরফে পরিনত হয়।তারপর ও এখানকার মানুষ বরফের মধ্যে কাটায়।সবচেয়ে কাছের শহর থেকে দুর্গম অয়মিয়াকন শহর পৌছাতে সময় লাগে দুদিন,সেখানে যাওয়ার রাস্তাটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক,এই রাস্তাটি তৈরী করতে দশ লাখের ও বেশি মানুষ মারা গেছে।ফ্রীজের ডিপে (-১৮ ডিগ্রী)সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে বরফ জমতে শুরু করে কিন্তু সাইবেরিয়ার অয়মিয়াকন শহরে শীতকালে (-৭২ ডিগ্রী ) পর্যন্ত তাপমাত্রা গড়ায়।বছরে নয় মাস ডিপফ্রীজের চেয়ে তিনগুন থান্ডার মধ্যে কাটাতে হয় অয়মিয়াকম শহরের বাসিন্দাদের।এখানকার তাপমাত্রা এতোটাই শীতল যে গরম পানি শূন্যে ছুড়ে দিলে তা মাটিতে পড়ার আগেই বরফে পরিনত হয়ে যায়।তাছাড়া পানির পাইপে বরফ জমে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শীতকালে পানির হাহাকার লেগে যায়।খাবার রান্না ও ঘর গরম রাখার সময় আগুনে বরফ গলিয়ে সেই পানি পান করেন স্থানিয় বাসিন্দারা।যানবাহনে যারা চলাচল করেন তাদের গাড়ি সবসময় স্ট্রাট দিয়ে রাখতে হয় কারন গাড়ী একবার বন্ধ হলে ঠান্ডায় বরফ জমে আচ্ছাদিত হয়ে আটকে যায়।অয়মিয়াকন শহরের মানুষের প্রধান খাদ্য ঘোড়ার মাংস,(-৫০ ডিগ্রী )তাপমাত্রায় খোলা আকাশের নিচে এরা সহজেই চলাফেরা করতে পারে তবে ঠান্ডার কারনে তাদের শরিরে বরফ জমাট বাধে আর এই বরফ ছাড়াতে শক্ত চিরুনী ব্যাবহার করেন ঘোড়ার মালিকেরা।এখানে ঠান্ডার কারনে যেকোন খাবার বরফে পরিনত হয়ে এতো দ্রুত শক্ত হয় যে সেটি দিয়ে হাতুরির কাজ ও করা যায়।তবে আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে অয়মিয়াকন নদীর উপরের অংশে বরফ জমলেও নিচের পানি তরলই থাকে,আর সেখানে বসবাস করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।নদীর পানির উপর জমাট বাধা বরফ ছিদ্র করে নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেন স্থানীয়রা ।তবে মাছগুলো পানি থেকে তোলার সাথে সাথেই বরফে পরিনত হয়ে যায়।গ্রীস্ম কালে এখানকার দিনের দৈর্ঘ্য হয় ২১ ঘন্টা আর শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য হয় মাত্র তিন ঘন্টা।সেই সময় তাপমাত্রা (-৫০ ডিগ্রী )কম হলে বাড়ীর বাহিরে বের হওয়া একেবারেই অনিরাপদ।
সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয় ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে অয়মিয়াকনের তাপমাত্রা (-৭২ ডিগ্রী) সেলসিয়াস পর্যন্ত বিরাজ করে যা পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড গড়ে সবচেয়ে শীতল শহর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।শীতকালে ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে কাপড় কাঁচলেও তা বরফে শক্ত হয়ে বরফে অনুপযোগি হয়ে পড়ে ।এখানে কোন বসত বাড়ীতেই টয়লেট নেই,প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নাড়ী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে ঘরের বাহিরে যেতে হয় ।অয়মিয়াকনের বাসিন্দারা দিন দিন খাটো হয়ে যাওয়ায় শীতল শহর ত্যাগ করতে শুরু করেছে ।এখানে এক হাজারের ও কম লোক বসবাস করে।অয়মিয়াকন নদীর নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে শহরটির।পুরো শহরটিকেই বলা হয় ডিপ ফ্রীজ।এখানকার তাপমাত্রা এতোটাই খারাপ যে সবচেয়ে কাছের শহর থেকে অয়মিয়াকনে আসতে সময় লাগে দুদিন আর বিমান উদ্যায়নের কথা কল্পনাই করা যায় না ।সোভিয়েত আমলে জোসেফ স্ট্যালিন জেলে থাকা রাজ বন্দীদের দিয়ে অয়মিয়াকনের রাস্তা তৈরী করেন ,প্রতিকূল আবহাওয়ার কারনে রাস্তা তৈরী করতে যেয়ে প্রায় দশ লাখ লোক মারা গেছেন যাদের সমাহিত করা হয়েছে রাস্তার বরফে।মৃতদের হাড় রাস্তার বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করায় সড়কের নাম করন করা হয় “রোড অফ বোনস্”।রাস্তায় বেরোলে যেকোন মুহুর্তে কাঁচের মতো বরফের আঘাতে আহত হবার আশংকা থাকে ।অয়মিয়াকন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ মিটার উচুতে অবস্থিত এর আশে পাশে কোন সমুদ্র না থাকায় চরম ভাবাপন্ন তাপমাত্রায় প্রশমিত হতে পারে না তাই তাপমাত্রা এতোটাই শীতল।এই শহরে যারা বেড়াতে যায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয় কারন তারা পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল শহরের সাক্ষী হয়ে থাকবে ।

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*